Play all audios:
‘কফি হাউজের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই, কোথায় হারিয়ে গেলো সোনালী বিকেলগুলো সেই। আজ আর নেই।’ মান্না দের গাওয়া সেই বিখ্যাত গানটি মনের কোণে প্রায়শই নাড়া দিয়ে ওঠে। কফি হাউজের আড্ডাটা একেবারে হারিয়ে
না গেলেও স্থবির করে দিয়েছে মহামারি করোনা। আড্ডা মনের তৃষ্ণা মেটায়। মন প্রফুল্ল রাখতে আড্ডার বিকল্প নেই। আর আড্ডায় যদি প্রিয় মানুষের উপস্থিতি থাকে, তবে তো সোনায় সোহাগা।
ক্লাসের ফাঁকে ভবনের করিডোরে, শিক্ষক আসতে দেরি হলে পাশের ক্যান্টিন কিংবা চায়ের দোকানে কফিশপে আড্ডা নিত্তনৈমত্তিক ব্যাপার। এছাড়াও ক্যাম্পাসে বিভিন্ন চত্বর আড্ডায় ভরপুর থাকেই হরহামেশা। আড্ডা
দিতে ভালো লাগে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। আড্ডায় অনেক দীর্ঘ সময়কেও মনে হয় ক্ষণিক।
সময় কীভাবে পার হয়ে যায় টেরই পাওয়া যায় না। এত গেলো সাধারণ আড্ডার কথা। অনেকেই সন্ধ্যার পরে চায়ের টং দোকানে আড্ডা আর চায়ের চুমুকে হারিয়ে যায়। ভুলে যায় সারাদিনের ক্লান্তি, অবসাদ। নিমিশেই
অমানিশার মতো কেটে যায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। শীতকালে ক্যাম্পাসে রোদে বসে আড্ডাটাও মধুর। বিশেষ করে সকালের রোদ মিষ্টির মতো।
অফলাইন আড্ডা অনলাইনে বন্দি করে দিয়েছে ক্ষুদ্র এক অণুজীব। যার নাম করোনাভাইরাস। বৈশ্বিক এ মহামারির কারণে সুদীর্ঘ মার্চ থেকে বন্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। করোনা দ্বিতীয় ডেউয়ের আক্রমণ পড়ে গেছে
বাংলাদেশে। ফের জোরদার হচ্ছে নিয়ম-কানুন। মাস্ক না পরায় জরিমানাও হচ্ছে দেশের বিভিন্ন জায়গায়। এই সংকটময় মুহূর্তে স্থবির বন্ধুদের আড্ডা। দেখা মেলে না একে-অপরের। শত-হাজার মাইল দূরে। দীর্ঘ দিন নেই
সাক্ষাৎ। মনের কোণে জমে আছে হাজারো অজানা অনুভূতি।
করোনাকাল আমাদের বিচ্ছিন্ন করেছে পৃথিবী থেকে। ক্যাম্পাস বন্ধ তাতে কী? আড্ডা তো আর বন্ধ রাখা যায় না। আড্ডাগুলো হয়ে পড়েছে স্মার্ট ডিভাইসবন্দী। কেউ মোবাইলে, কেউ ল্যাপটপে, কেউ বা আবার কম্পিউটারের
সামনে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আড্ডা দিয়ে চলেছে।
অনলাইন আড্ডা অনেকটা দুধের সাধ ঘোলে মেটানোর মতো। ধরা যাবে না, ছোঁয়াও যাবে না, মনের অজানা আবেগ, অনুভূতিও প্রকাশ করা যায় না ভালোভাবে। এর বাইরেও প্রেমিক-প্রেমিকার কলহ তো আছেই। প্রিয় মানুষকে এক
পলক দেখতে আকুল মন। আবেগ অনুভূতিগুলো মাইক্রোফোন দিয়ে গিয়ে অপর প্রান্তের মোবাইলের স্পিকারে পৌঁছায়। তবু চলমান মহামারিতে এর চেয়ে বেশি কিছু চাওয়াও সমীচীন নয়। অনেকটা ‘নাই মামার চেয়ে কানা মামা
ভালো’ প্রবাদটির মতো।
লেখক: শিক্ষার্থী, ল’ অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।
কুষ্টিয়া/মাহি